খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ কার্তিক, ১৪৩১ | ২৬ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, অতিরিক্ত ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাতিল

গেজেট ডেস্ক

পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল নির্মাণের সময় দফায় দফায় কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়ে। তারই ছোঁয়া লেগেছিল পুরান ঢাকার ‘পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন’ প্রকল্পটিতে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য যা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল তার থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের কারণে সে প্রক্রিয়া আটকে গেছে।

প্রকল্পটি আগের বরাদ্দের টাকা দিয়েই সম্পন্ন হতে যাচ্ছে বলে কারা সূত্র জানিয়েছে। এতে রক্ষা পেয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় কারাগারটি ২০১৪ সালের ২৯ জুলাই কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেওয়ার পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন। ২০১৯ সালের ২৮ জুন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

ওই সময় বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার কারাস্মৃতি জাদুঘরকে কেন্দ্র করে প্রকল্প সাজানো হয়েছিল। এখন ওই প্রকল্পে পরিবর্তন আনছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন পরিকল্পনায় ঢাকার সংস্কৃতি-ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এ প্রকল্পে দুটি জাদুঘর থাকলেও সেগুলো থাকছে সেলের অধীনে।

আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, ‘প্রকল্পটির কাজ আপাতত বন্ধ আছে। তবে শিগগিরই পুরোদমে আবার শুরু হবে। আমরা আশা করছি, আগামী ছয় মাসের মধ্যে পার্ক, ওয়াকওয়েগুলো মানুষের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া যাবে।’

কারা সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রকল্পটি পর্যালোচনা করে ব্যয় কমিয়ে প্রস্তাব দিতে বলা হয়। সে অনুযায়ী নতুন করে অপ্রয়োজনীয় কিছু বিষয় কাটছাঁট করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

ঊর্ধ্বতন এক কারা কর্মকর্তা বলেন, কোনো ব্যক্তিকে হাইলাইট না করে বঙ্গবন্ধু কারা স্মৃতি জাদুঘর থাকবে দেওয়ানি সেলের অধীন। আর চার নেতার স্মৃতি জাদুঘর থাকবে আমদানি সেলের অধীন। এখানে ইতিহাস সংরক্ষণ করা হচ্ছে। দেওয়ানি সেলে ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। সে কারণে সেটাকে দেওয়ানি সেলই নামকরণ করা হবে। এখানে ব্যক্তিকে প্রাধান্য না দিয়ে কারাগারের ইতিহাসকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ২০২০ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালেও তা সম্ভব হয়নি। তখন নতুন করে মেয়াদ বাড়ানোসহ আরো ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে এক হাজার কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু প্রস্তাব পাস হওয়ার আগেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কারণে উল্টে যায় সব হিসাব-নিকাশ। ফলে এ প্রকল্পের জন্য এক হাজার কোটি টাকার দরকার হচ্ছে না।

প্রকল্পে মাল্টিপারপাস ভবন কমপ্লেক্স, চক কমপ্লেক্স, ঐতিহাসিক ভবন, পার্ক, ওয়াকওয়ে, জাদুঘর, কমিউনিটি সেন্টারসহ নানা নাগরিক সুবিধা রাখা হয়। এরই মধ্যে চক কমপ্লেক্স, মসজিদ, ওয়াকওয়ের কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। এ যাবৎ ১৬০-১৭০ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত শুরু হবে। সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও কারা অধিদপ্তর। নতুন করে ২০২৬ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ সম্পাদনের সময় বাড়ানো হয়েছে।

পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের এই কারাগার দেশের প্রাচীনতম কারাগার। প্রায় ২৩০ বছরের পুরনো এই কারাগারের রয়েছে প্রায় ৩৮ একর জমি। এর মধ্যে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে উঠবে প্রায় ২৫ একর জায়গার ওপর। এ জন্য ২০১৭ সালের অক্টোবরে পুরনো কারাগারের ইতিহাস ও ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ, ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইন, পারিপার্শ্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি উন্মুক্ত নকশা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগ ও কারা অধিদপ্তর। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় ৩৪টি প্রতিষ্ঠান নকশা ও মডেল জমা দেয়। এর মধ্যে স্থাপনাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘ফর্ম থ্রি আর্কিটেক্টস’-এর নকশা নির্বাচিত হয়।

জায়গাটিকে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ জোনে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে কারাগারের উত্তর অংশের জোন ‘এ’ এলাকায় একটি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। এখানে কনভেনশন হল, সুইমিং পুল, সিনেপ্লেক্স ও চার শতাধিক গাড়ির পার্কিং সুবিধা থাকবে। কারাগারের দক্ষিণ অংশটি জোন ‘বি’। এখানে চক কমপ্লেক্স নামের একটি দোতলা ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে বইয়ের দোকান ও ফুডকোর্ট থাকবে। পাশে শিশুদের খেলার জায়গা, মসজিদ, পুকুর ও ৮৫টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও রাখা হবে। এ ছাড়া কারাগারের মাঝের অংশে জোন ‘সি’তে দেওয়ানি ও আমদানি সেল রাখা হচ্ছে, যাতে থাকবে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও জাতীয় চার নেতা স্মৃতি জাদুঘর। পুরনো কারাগার ও এর ইতিহাস সংরক্ষণ করা হবে। পাশেই থাকবে কারা উদ্যান, লেক, গ্রন্থাগার, হাঁটাচলার পথ। নির্মাণ করা হবে পৃথক দুটি মসজিদ। সব মিলিয়ে মোট আয়তনের প্রায় অর্ধেক জায়গা উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!